মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো: আশরাফ আলী খান খসরু বলেছেন, আগের মতো প্রত্যেক বাড়িতে দুই চারটি গাছ লাগালে ওই পরিবারের সারা বছরের নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্মত সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব। শনিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটরিয়ামে চতুর্থবারের মতো জাতীয় সবজি মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্মৃতিচারণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক সময় গ্রামের বাড়ি বড়ি এক ধরনের মরিচ ও বেগুন দেখা যেতো, যা সারা বছর চাষ হতো। এখন আর তা দেখা যায় না। সেই মরিচ ও বেগুন ফিরিয়ে আনার জন্য কৃষি সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি। আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, শুধু নিরাপদ ও পুষ্টিমানের সবজি নয়। সারা বছরের নিরাপদ প্রাণীজ আমিষাৎ মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম গ্রহনের পরিমানও বাড়াতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ অমিদাভ দাসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) ড. মো: আব্দুর রৌফ। স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কৃষিবিদ শাহ মো. আকরামুল হক।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শাক-সবজি আবাদে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান, জেলা ও মেলায় অংশগ্রহনকারী স্টলের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করেন। পুরষ্কার হিসেবে ছিলো ক্রেষ্ট, সনদ ও নগদ টাকা। জাতীয় পর্যায়ে ২০১৮ সালে শাকসবজি আবাদে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ব্যক্তিগত পর্যায়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মো. বদু মিয়া ও দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মো. হামিদুল ইসলাকে যৌথভাবে প্রথম পুরস্কার প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় হয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মোছা: বেলী বেগম। তৃতীয় হয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সুরেশ্বর মল্লিক। বিশেষ পুরস্কার পান খাগড়াছড়ির মাটিরাংগা উপজেলার সফল প্রতিবন্ধী কৃষক মো: সফিউল বাশার। এছাড়াও বাড়ির ছাদে শাকসবজি আবাদে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে ঢাকার মিরপুর এলাকার মো: আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদপুরের মো: হামিদুর রহমান ও যাত্রাবাড়ীর মো: সাইফুল ইসলামকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার মেসার্স প্রবাস স্মৃতি এগ্রো ফার্মকে প্রথম ও নাটোরের সদর উপজেলার দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম এন্ড নার্সারীকে দ্বিতীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়। শাক-সবজি উৎপাদনে হেক্টর প্রতি গড় ফলন সর্বোচ্চ ও দেশের সবজির চাহিদা পূরনে বিশেষ অবদান রাখায় জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে রাজশাহী, দ্বিতীয় সাতক্ষীরা ও যৌথভাবে তৃতীয় কক্সবাজার এবং মাদারীপুর জেলা।
স্টলের যথার্থতা, সাজসজ্জা, প্রদর্শিত দ্রব্যের মান ও পরিমান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা উপস্থাপন করে জাতীয় সবজি মেলা ২০১৯ এ অংশগ্রহনকারী স্টলগুলোর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। দ্বিতীয় হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং তৃতীয় কৃষি বিপনন অধিদপ্তর (ড্যাম)। বেসরকারি পর্যায়ে প্রথম হয়েছে এসিআই সীড, এসিআই লিমিটেড, দ্বিতীয় লাল তীর সীড লিমিটেড এবং তৃতীয় মেটাল এগ্রো লিমিটেড। মেলায় অংশগ্রহনকারী অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।
মেলায় সরকারি ১০টি ও বেসরকারি ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের ৭৪টি স্টল ও ৪টি প্যাভেলিয়ন অংশ নেয়। ২৭ প্রকারের শিম ও ২৩ প্রকারের আলুসহ ১৩৬ প্রকারের শাক-সবজি প্রদর্শিত হয় এবারের মেলায়। ‘নিরাপদ সবজি করব চাষ, পুষ্টি মিলবে বার মাস’ প্রতিপাদ্যে এ মেলার আয়োজক কৃষি মন্ত্রণালয়।